জমি কেনার পর বা উত্তরাধিকারসূত্রে জমি পাওয়ার পর আপনার নাম খতিয়ানে যুক্ত করতে হলে 'নামজারি' করতেই হবে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আইনগত প্রক্রিয়া যা আপনার মালিকানাকে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো নামজারির ধাপগুলো, কী কাগজপত্র লাগে, খরচ কত, সময় কত লাগে এবং কীভাবে আপনি ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
নামজারি বলতে কী বোঝায়?
নামজারি (Mutation) হল সরকারি রেকর্ডে জমির মালিকের নাম পরিবর্তন বা হালনাগাদের প্রক্রিয়া। এটি ভূমি অফিসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নতুন মালিক হিসেবে আপনি তখন সরকারিভাবে স্বীকৃত হবেন।
কখন নামজারি করতে হয়?
- জমি ক্রয় করার পর
- উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পাওয়ার পর
- হিবা (উপহার) দলিলের ভিত্তিতে জমি স্থানান্তরের পর
- বন্টননামা অনুযায়ী জমি ভাগ হলে
নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- দলিলের সত্যায়িত কপি
- জমার রশিদ/পর্চা
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- খাজনা পরিশোধের রশিদ
- দলিলের ব্যাখ্যামূলক কাগজপত্র (যদি থাকে)
- হালখতিয়ান কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
নামজারি আবেদনের ধাপসমূহ (অফলাইন)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন
- উপজেলা ভূমি অফিসে যান
- সংশ্লিষ্ট ফরম পূরণ করুন
- ফি জমা দিন (৩০ টাকা নির্ধারিত ফি, তবে অন্যান্য খরচ থাকতে পারে)
- আবেদন জমা দিন ও রশিদ নিন
- মৌজা সার্ভেয়ার ও সহকারী কমিশনার তদন্ত করবেন
- সঠিক হলে আপনার নামে খতিয়ান প্রস্তুত হবে
নামজারি করতে কত সময় লাগে?
নিয়ম অনুযায়ী নামজারি সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ৪৫ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে তথ্য ভুল থাকলে বা তদন্তে সমস্যা হলে বেশি সময়ও লাগতে পারে।
নামজারির খরচ কত?
- সরকারি নির্ধারিত ফি: ৩০ টাকা
- নথিপত্র সত্যায়ন ও ছবি: ১০–৫০ টাকা
- কখনো কখনো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা আইনজীবীর মাধ্যমে করতে চাইলে অতিরিক্ত খরচ হয় (২০০–৫০০ টাকা পর্যন্ত)
অনলাইনে নামজারি আবেদন করার পদ্ধতি
বর্তমানে বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে নামজারি আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আপনি ঘরে বসেই নামজারির আবেদনের কাজ করতে পারবেন। নিচে ধাপে ধাপে পদ্ধতি দেওয়া হলো।
ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে ভিজিট করুন https://mutation.land.gov.bd
ধাপ ২: রেজিস্ট্রেশন করুন
- আপনার নাম, মোবাইল নম্বর ও NID দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলুন
- ইমেইল বা ফোনে OTP আসবে, তা দিয়ে ভেরিফাই করুন
ধাপ ৩: আবেদন ফরম পূরণ
- আপনার জমির তথ্য, দলিল নম্বর, জমির পরিমাণ, মৌজা ইত্যাদি লিখুন
- আপলোড করুন প্রাসঙ্গিক দলিল ও NID
ধাপ ৪: ফি পরিশোধ
নামজারি ফি আপনি অনলাইনে বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক কার্ড দিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন।
ধাপ ৫: জমা ও ট্র্যাকিং
আবেদন জমা দিলে আপনি একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন, যা দিয়ে আপনি স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন।
টিপস: নামজারি করতে গিয়ে যা মাথায় রাখবেন
- সঠিক দলিল ছাড়া আবেদন করবেন না
- দালালের সাহায্য না নিয়ে নিজে প্রক্রিয়া বুঝুন
- অনলাইনে আবেদন করলে সমস্ত ডকুমেন্ট স্ক্যান করে রাখুন
- যেকোনো সমস্যায় উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন
নামজারি নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন: নামজারি না করলে কী হবে?
আপনি সরকারিভাবে মালিক হিসেবে গণ্য হবেন না, ভবিষ্যতে জমি নিয়ে আইনি সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন: একাধিক মালিক থাকলে কী করতে হবে?
বন্টননামা বা চুক্তিপত্র দিয়ে যৌথ আবেদন করতে হবে।
উপসংহার
নামজারি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা সঠিকভাবে না করলে জমি সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। তাই সময় মতো এবং সঠিক নিয়মে নামজারি করা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি অনলাইনে আবেদন করেন, তাহলে হয়রানি কম হবে এবং সময়ও বাঁচবে।
এই পোস্টটি যদি আপনার উপকারে আসে, তবে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং পরবর্তী সিরিজে আমরা জানবো ‘জমির দলিল ও রেজিস্ট্রেশনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া’।