বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে সাইবার অপরাধ, হ্যাকিং, ফিশিং, ডিজিটাল চাঁদাবাজি ইত্যাদি ঝুঁকি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা কী?
ডিজিটাল নিরাপত্তা বলতে বোঝায়, অনলাইন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তথ্য, পরিচয়, আর্থিক লেনদেন ও ডিভাইসসমূহকে সাইবার অপরাধ ও অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা করার প্রক্রিয়া। এটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে জড়িত।
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তার বর্তমান চিত্র
- বাংলাদেশে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে
- অনলাইনে আর্থিক লেনদেন বেড়েছে বহুগুণ
- সাইবার অপরাধও বেড়েছে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি
- অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও সাইবার নিরাপত্তায় সচেতন নয়
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে, যার মাধ্যমে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা এবং অনলাইনে কুৎসা রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও এই আইন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তথাপি এটি ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আইনের কিছু প্রধান ধারা:
- উস্কানিমূলক তথ্য ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ
- হ্যাকিং বা অবৈধ প্রবেশে জেল ও জরিমানা
- ভুয়া নিউজ বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে শাস্তি
- ব্যক্তিগত তথ্যের অননুমোদিত ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয়
সাইবার অপরাধের সাধারণ ধরন
- ফিশিং (ভুয়া লিংকের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া)
- স্প্যাম ও ভাইরাস আক্রমণ
- অশ্লীল ছবি বা ভিডিও ছড়ানো
- ব্ল্যাকমেইলিং ও ডিজিটাল চাঁদাবাজি
- সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাকিং
- বিপজ্জনক অ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যবহারে তথ্য ফাঁস
ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়
- দৃঢ় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
- টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখুন
- সন্দেহজনক লিংক ক্লিক করবেন না
- অজানা অ্যাপ ইনস্টল করবেন না
- আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
- নিয়মিত ডিভাইস স্ক্যান করুন
প্রতিষ্ঠান ও সরকারি উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং CERT (Computer Emergency Response Team) দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা সপ্তাহ পালিত হয় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।
ডিজিটাল নিরাপত্তায় নাগরিকের করণীয়
- নিজের সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইল নিরাপদ রাখুন
- শিশুদের অনলাইন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- কোনো হুমকি বা অপরাধমূলক বিষয় দেখা মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান
- ‘৩৩৩’ বা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে সাহায্য নিন
উপসংহার
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমন্বিতভাবে সচেতনতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা একটি নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
আপনার দায়িত্ব: আজ থেকেই আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার সুরক্ষিত করুন। সচেতন হোন, নিরাপদ থাকুন।