Part 2 –
১. বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন
শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিচার বিভাগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক দেখা গেছে উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা নিয়ে। সমালোচকরা বলছেন, বিচার বিভাগ কার্যত নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ হয়ে পড়েছে।
- প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ: ২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
- বিচারক বদলি ও নিয়োগ: কিছু নিয়োগ ও বদলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচনা হয়।
- আইনের প্রয়োগে বৈষম্য: ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা জোরদার করার অভিযোগও উঠেছে।
২. প্রশাসনিক সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
সরকারি অফিসে সেবার মান কিছুটা উন্নত হলেও দুর্নীতি রয়ে গেছে অন্যতম সমস্যা:
- এনালগ থেকে ডিজিটাল সেবা: ঘুষ-দুর্নীতি রোধে ডিজিটাল আবেদন ও পেমেন্ট চালু হয়েছে অনেক দপ্তরে।
- দুর্নীতির চিত্র: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (TIB) রিপোর্টে এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অস্তিত্ব রয়েছে বলে বলা হয়।
- দুর্নীতিবিরোধী অভিযান: ২০১৯ সালে যুবলীগের ক্যাসিনোকাণ্ড, বহিষ্কার, ও গ্রেপ্তারের ঘটনা সরকারপক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত বলে ধরা যায়।
৩. আইনশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনা সরকার প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৬ সালের গুলশান হামলার পর কড়া অবস্থান নেওয়া হয়:
- অপারেশন থার্টিন: বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি কার্যক্রম রোধ করা হয়।
- সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অনেকটা প্রশংসিত হলেও কিছু ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
৪. আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক
শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা কিছু ইতিবাচক ও কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
- ভারতের সাথে সম্পর্ক: স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এবং রেল/বন্দর ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তবে তিস্তা চুক্তি এখনো হয়নি।
- চীন ও রাশিয়ার সাথে উন্নয়ন সহযোগিতা: রূপপুর, মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর এসব প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে।
- আন্তর্জাতিক সমর্থন: রোহিঙ্গা সংকটে শেখ হাসিনা সরকারের মানবিক ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে জাতিসংঘে।
৫. শাসনব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ না একনায়কতন্ত্র?
সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়, তারা রাষ্ট্রকে স্থিতিশীলতা দিয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা বলে থাকেন, এটি একটি ‘সুশীল স্বৈরতন্ত্র’।
- স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়ার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
- নাগরিক সমাজ ও ছাত্র সংগঠনের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপসংহার (Part 2)
এই পর্বে বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি, প্রশাসন ও বৈদেশিক নীতির আলোকে শেখ হাসিনা সরকারের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হলো। একদিকে রয়েছে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, অন্যদিকে রয়েছে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন।
পরবর্তী পর্বে: আমরা দেখবো শেখ হাসিনা সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, Vision 2041, এবং একটি টেকসই ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।