ভূমি জরিপ বা সেটেলমেন্ট হলো একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সরকারি দলিলভিত্তিক জমির পরিমাণ, অবস্থান ও মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে ভূমি জরিপের তিনটি মূল ধরণ রয়েছে: সিএস, এসএ এবং আরএস জরিপ। বর্তমানে ডিজিটাল খতিয়ান তৈরির জন্য মৌজা জরিপ ও সেটেলমেন্ট অব্যাহত আছে।
১০. ডিজিটাল খতিয়ান ও ম্যাপ অনলাইন থেকে ডাউনলোড
বর্তমানে land.gov.bd এবং dlrs.gov.bd সাইট থেকে ঘরে বসেই নিজের খতিয়ান, দাগ, ম্যাপ পাওয়া সম্ভব। ভূমি তথ্য ডিজিটাল হওয়ায় সাধারণ জনগণ প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমেছে। এর জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট জেলার নাম, মৌজা নম্বর, খতিয়ান নম্বর ও দাগ নম্বর দিতে হয়।
১১. জমি রেজিস্ট্রেশন ও দলিল সম্পাদন প্রক্রিয়া
জমি রেজিস্ট্রেশন বলতে বুঝায় সরকারি স্ট্যাম্পে জমির দলিল প্রস্তুত ও তা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিবন্ধন করা। দলিল প্রস্তুত করতে একজন লাইসেন্সধারী লেখক প্রয়োজন হয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় ক্রেতা-বিক্রেতা, দুইজন সাক্ষী এবং নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। দলিল নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর নামজারি শুরু করা যায়।
১২. নামজারি না হলে করণীয়
অনেক সময় দলিল হস্তান্তরের পরও নামজারি না হলে তা ভবিষ্যতে সমস্যার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নির্ধারিত ফরম পূরণ, দলিল কপি, খতিয়ান, ম্যাপসহ আবেদন করতে হয়। যদি নামজারি না হয়, তাহলে ভূমি আপিল বোর্ডে আবেদন করা যায়।
১৩. জমি মালিকানা নিয়ে বিরোধের সমাধান
জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য স্থানীয় সালিশ ব্যবস্থা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জেলা ভূমি প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি বিরোধ তীব্র হয়, তাহলে দেওয়ানি মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে সমাধান নিতে হয়।
১৪. নারী ও সংখ্যালঘুদের জমির অধিকার
নারী ও সংখ্যালঘুদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর জমি পাওয়ার অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার রক্ষায় সংবিধান ও বিভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়।
১৫. ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে প্রদান
বর্তমানে ldtax.gov.bd সাইটের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা যায়। এতে ইউজার রেজিস্ট্রেশন করে খতিয়ানের তথ্য দিয়ে কর নির্ধারণ করে মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড বা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
১৬. জমি কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই যাচাই করবেন
- জমির খতিয়ান ও দাগ সঠিক আছে কিনা
- রেকর্ডে মালিকের নাম বর্তমান কিনা
- মিউটেশন ও নামজারি সম্পন্ন হয়েছে কিনা
- জমি কোনো মামলা বা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে কিনা
- ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধিত কিনা
১৭. ভূমি বিষয়ক সেবা পেতে কোথায় যাবেন?
প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেতে হবে। এছাড়া উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং ভূমি মন্ত্রণালয় রয়েছে। অনেক সেবা অনলাইনে পাওয়া যায়, যেমন: নামজারি, খতিয়ান, কর প্রদান ইত্যাদি।
১৮. উপসংহার
জমি-জমা সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান না থাকায় সাধারণ জনগণ প্রায়শই প্রতারণার শিকার হন। এই লেখার মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো, যাতে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ভূমি বিষয়ক জ্ঞান অপরিহার্য।